যখন F-22 এর থেকেও বেশি স্টেলথ ফাইটার জেট বাতিল করে দেয় আমেরিকা।ঘটনাটা জানেন কি?
আমেরিকার F-22 র্যাপটর এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যজনক ফাইটার জেট।কারন বর্তমান পৃথিবীতে অন্যান্য দেশ গুলি যে টেকনোলজির জন্য হাহুতাশ করছে,সেই টেকনোলজি আমেরিকার কাছে আছে আজ থেকে বহু বছর আগে থেকেই রয়েছে।আর সেটা হল আমেরিকার বায়ুসেনার F-22 র্যাপটর জেট।২০০৫ সালে সার্ভিসে আসার পর ,আজ পর্যন্ত এর সত্যিকারের দ্বিতীয় কোন প্রতিদ্বন্দ্বী কে তুলে ধরতে পারে নি অন্য কোন দেশ।
আর এই F-22 র্যাপটরকে আমেরিকানরা তাদের অতি ঘনিষ্ঠ কোন বন্ধু দেশের কাছেও বিক্রি করে নি।এই F-22 ঠিক কতটা স্টেলথ তা আপনি একটি ঘটনা থেকেই বুঝতে পারবেন।আমেরিকার এয়ারফোর্সের F-22 এবং F-15 এর মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ডগফাইট হওয়ার সময় ,F-15 এর পাইলট লক্ষ্য করে যে সে খালি চোখে তার সামনে F-22 কে দেখতে পাচ্ছে,অথচ তার ফাইটারের রাডারে কোন জেট ধরা পরছে না।
অথচ এই মহামূল্যবান F-22 আমেরিকার এয়ারফোর্সে সার্ভিসে এসেছে খুবই কষ্ট করে,নতুবা এই F-22 এত দিন বাতিলের খাতায় শুধু একটা প্রজেক্ট হিসাবে পরে থাকত।আর F-22 এর বদলে সার্ভিসে আসত অন্য এক ফাইটার।আজ তার সম্পর্কেই আলোচনা করব।
আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে আমেরিকা তাদের এয়ার ফোর্সের জন্য একটি ফাইটার জেট কম্পিটিশন জারি করে।যার মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি ফাইটার জেট সার্ভিসে আনা,যা অন্যান্য দেশের কাছে ধরা ছোয়ার বাইরে থাকবে,যেটি সম্পুর্ন আন্য প্রজন্মের হবে।আর এই কম্পিটিশনের নাম ছিল - 'অ্যাডভান্স ট্যাকটিক্যাল ফাইটার' (ATF) কম্পিটিশন।আর এই কম্পিকিশনে ১৯৯১ সালে লকহিড মার্টিনের প্রোটোটাইপ YF-22 র্যাপটরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল নর্থট্রুপের YF-23।
পাশাপাশি YF-22 এবং YF-23
F-22 র্যাপটর বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট এয়ার সুপিরিয়রিটি ফাইটার হলেও, যদি বলা হল ডিজাইন এর কথা আসে,যদি উন্নত ইঞ্জিনের কথা আসে,তবে লকহিড মার্টিনের F-22 থেকে নর্থট্রুপের F-23 অনেক এগিয়ে ছিল।F-23 এর YF-120 ভেরিয়াবল সাইকেল ইঞ্জিন সেই সময়ের সবচেয়ে অ্যাডভান্স এবং যুগের থেকে এগিয়ে থাকা ইঞ্জিন ছিল।F-22 এর থেকে F-23 অধিক দ্রুতগতির ফাইটার জেট ছিল।কিন্তু F-22 এর থ্রাস্ট ভেক্টরিং কনট্রোল F-22 কে ম্যানুভারিটির দিক দিয়ে F-23 থেকে সামান্য এগিয়ে ছিল।যদিও এই তথ্যটি বিতর্কিত।
টেষ্ট পাইলট পল মেটজ,যে প্রথমে নর্থট্রুপের YF-23 এর টেষ্ট পাইলট ছিলেন এবং পরে লকহিড মার্টিনের YF-22 এর চীফ টেষ্ট পাইলট হয়েছিলেন,তিনি জানান ':--
" YF-22 এবং YF-23 এর অ্যাঙ্গেল অফ অ্যাটাক (AOA) সম্পুর্ন এক ছিল ,তা ৬০°।অথচ এই একই ম্যানুভারিং করতে যেখানে YF-22 এর থ্রাষ্ট ভেক্টরিং করতে হত,সেখানে YF-23 সেটা থ্রাষ্ট ভেক্টরিং ছাড়াই করতে পারত।YF-23 এর ভি-টেইল এই ধরনের ম্যানুভারিটির জন্য খুবই উপযোগী ছিল ।এটা সত্যি যে YF-22 এর থ্রাষ্ট ভেক্টরিং ,YF-22 থেকে একে সামান্য একটু হলেও বেশি ম্যানুভার করত।তবে এটা শুধুমাত্র একদম লো স্পীডেই সম্ভব ছিল।সাধারণ গতিবেগ অথবা সুপারসনিক গতিবেগে YF-23 বেশি কার্যকর ছিল।ফ্লাইট টেষ্ট ইভেন্টে কম্পিটিশনের পাবলিক রিলেশন ভ্যালুটা লকহিড মার্টিন ভালোই বুঝতে পেরেছিল,যা নর্থট্রুপ বুঝতে পারেনি। লকহিড মার্টিন কম্পিটিশনের বিচারকদের মনোভাব বুঝতে পেরেছিল।নতুন গঠিন "এয়ার কমবেট কমান্ড" সদস্যরা কম্পিটিশনের এর বিচারক নিয়োজিত ছিল।আর এই বিচারকদের অধিকাংশই তাদের সার্ভিস লাইফে তাদের জেট নিয়ে ভিসুয়াল রেঞ্জে ডগফাইটের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।ব্যাপারটা লকহিড ধরতে পারে,আর তাই তারা ফ্লাইট টেষ্ট ইভেন্টে জেটের ম্যানুভারিটির ওপর বেশি জোড় দেয়,তারা ইভেন্টে স্লো মুভিং F-22 এর সাথে ডগফাইট,এবং তার সাথে হাই অ্যাঙ্গেল অফ অ্যাটাকে মিসাইল ফায়ার করে দেখায়।
অপর দিকে নর্থট্রুপ YF-23 এর ভিজুয়াল রেঞ্জে ডগফাইটের পরিবর্তে জেটের অন্যান্য ক্যাপাবিলিটির ওপর জোড় দেয়।আর এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল।বিচারকগন খালি চোখের দৃষ্টিতে দেখতে ভালো লাগা YF-22 কেই বেছে নেয়।
আর এভাবেই কোম্পানির সামান্য ভুলের জন্য পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাইটার জেটটি সার্ভিসে আসতে পারেনি,যেটি প্রায় সব দিক থেকে F-22 থেকে এগিয়ে ছিল।YF-23 এর স্টেলথ ডিজাইন এতটাই কার্যকরী ছিল যে ,মনে করা হয় আমেরিকার আগামী প্রজন্মের অর্থাৎ ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার জেট এর ওপরেই নির্মিত হয়েছে,যার টেষ্টিং চলছে এরিয়া-৫১ তে।
Comments
Post a Comment