ভারতীয় সেনাবাহিনীর আরো একটি শৌর্যের কাহিনী।পড়লে আপনিও রোমাঞ্চিত হবেন।


       এটা হল একটা পর্দার পেছনের কাহিনী যা জনসম্মুখে আনা হয়নি!কারন ভারতীয় আর্মি নামে নয় কর্মে বিশ্বাসী।আর পর্দার পেছনের এই কাহিনীটি হল অপারেশন অ্যাপাচি।

         খুকরি হাতে ভারতীয় গোর্খা জ‌ওয়ান

      অপারেশনের শুরুর আগের কাহিনী ছিল অত‍্যন্ত বেদনা দায়ক!কাশ্মিরে পিরপাঞ্জাল এবং হিমালয়ান বিভিন্ন রেঞ্জ গুলিতে বহুযুগ ধরে বসবাস করে আসছে শান্তিপ্রিয় বাকার‌ওয়াল উপজাতির মানুষরা।এদের গুর্জর নামেও পরিচিতি রয়েছে।হিমালয়ান রেঞ্জের কঠোরতম জায়গা গুলিতে এরা খুব কষ্টে জীবনধারণ করে আসছে।এদের মূল জীবিকা হল পশুচারন।হিমালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ছাগল,ভেড়া চরিয়েই এরা দিনযাপন করত।এর বাইরে তাদের চাহিদা খুব অল্প‌ই।আর ২০০১ সালে এই ধরনের শান্তিপ্রিয় মানুষদের ওপরে নেমে আসে এক শয়তানের দৃষ্টি !

     ২০০১ এর দিকে কাশ্মিরে জঙ্গি কার্যকলাপ চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।ব‍্যাপরটা এমন পর্যায়েই দাড়িয়েছিল আর জঙ্গিরা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস (RR) এর হেড কোয়ার্টার এর পাশের জঙ্গলে স্থানীয় জঙ্গিরা রীতিমতো ক্রিকেট খেলত।এতটাই সাহস জঙ্গিদের বেড়ে গিয়েছিল।যাই হোক এই সময় গুলিতে আর্মিকেও খুব ব‍্যাস্ত থাকতে হত জঙ্গি নিধনের জন‍্য।পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিটা জঙ্গি আক্রমনকে কঠোর হাতে দমন করত আর্মি।এর ফলে পাকিস্তানের জঙ্গিরা আর্মির হাতে ব‍্যাপক সংখ্যক মারা পরতে লাগল।তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে,আর্মির হাতে মার খাওয়ার পর তারা,আর্মির বিরুদ্ধে কিছু করতে না পেরছ,LOC সংলগ্ন বিভিন্ন উপজাতিদের ঘড়ে হামলা করে পুনরায় পাকিস্তানের অভ‍্যান্তরে চলে যেত।

     ২০০১ সালে এমনই একটি ঘটনা ঘটে।পাকিস্তান আর্মির মদত প্রাপ্ত একটি জঙ্গি দল আর্মির কাছে মার খেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় একটি গুর্জর পরিবারের ওপর হামলা চালায় , পরিবারের সদস‍্যদের মাথা কেটে নেয় এবং তাদের পশু গুলিকে চুরি করে নিয়ে যায়।ঘটনার পর স্থানীয় গুর্জর মানুষেরা আর্মির কাছে আসে এবং এই অত‍্যাচারের কথা জানায়।

    
    এর পরেই এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় আর্মি একটি ক্রস লাইন অফ কনট্রোল অপারেশন চালায় , যেটি হল অপারেশন অ্যাপাচি ! অপারেশনের দায়িত্ব নেয় 9 PARA SF ।এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অপারেশন ছিল ,যেটি এতটাই গোপন ছিল যে সয়ং ভারত সরকারকে পর্যন্ত প্রথমে এই অপারেশনের খবর জানানো হয় নি।তাই এই অপারেশনের ওপর আর্মির অনেক কিছু নির্ভর করছিল!কারন যদি অপারেশনে সফলতা না আসত তবে তা ভারত সরকার থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হত না ,বরং আর্মির ওপর স্টেপ নেওয়া হতে পারত।সর্বোপরি এই অপারেশন আর্মির কাছে আত্মসম্মানের ও লড়াই ছিল।

২০০১ সালে ১৯ শে নভেম্বর আর্মির এলিট স্পেশাল ফোর্স PARA SF অপারেশন অ্যাপাচি শুরু করে।গভীর অন্ধকারে ৭০ জন PARA SF লাইন অফ কনট্রোল পেরিয়ে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে তাদের টার্গের উদ্দেশ্যে র‌ওয়না হয়।তাদের টার্গেটের মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে পাকিস্তান আর্মির একটি বড় আস্তানা ছিল।PARA SF রা তাদের টার্গেটের নিকট যায় এবং তাদের টার্গেট কনফর্ম করে।সেখানে জঙ্গিদের সাথে পাকিস্তানি সোলজাররাও ছিল।তবে পাকিস্তান আর্মি বেসের কোনায় বসে এত কিছু হতে চলেছে তা কেউ ঘূর্নাক্ষরেও টের পায়নি।এর পর শুরু হয় অতর্কিত হামলা‌।নাহ: এটা যেহেতু প্রতিশোধের লড়াই ছিল,তাই PARA SF রা তাদের বন্দুকের সাথে সাথে ছুড়ির ব‍্যাবহার বেশি করেছিল সেই দিন।ধরে ধরে প্রতিটা জানোয়ারের ধর থেকে মাথা আলাদা করতে শুরু করে PARA SF রা।একটি ৬ ফুট ৪ ইঞ্চীর পাকিস্তানি পাঠান সোলজার এক এক PARA SF কে মারার চেষ্টা করে,সেই PARA SF আবার একজন গোর্খা ছিলেন।গোর্খা আহত হলেও,ঐ দিন শেষ পর্যন্ত পাঠানের মাথাটা সে আলাদা করেছিল।

     অপারেশন শেষ করে শত্রুর রক্তে স্নান করে সফল ভাবে ঘরে ফিরেছিল PARA SF জোয়ানরা।১০০+ জঙ্গি ও পাকিস্তানি সোলজার ক্ষতম করেছিল সেদিন ।আর তার পর পুরস্কার স্বরূপ ছয় পাকিস্তানি জানোয়ারের মাথা কেটে এনেছিল ভারতীয় শিকারিরা।

        অপারেশনের পুরস্কার জ‌ওয়ানদের হাতে

   এই ঘটনার পর কঠিন একটা বার্তা পেয়েছিল পাকিস্তান আর্মি।ভারতীয় আর্মির জন‍্য তাদের দেশের মানুষের কি মূল‍্য , তারা তা বুঝতে পেরেছিল!

Comments